Lagnajita Chakraborty: লগ্নজিতা বিতর্কের পুনরাবৃত্তি! এবার 'তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো' গাইতে বাধা শিল্পীকে, কেড়ে নেওয়া হল মাইক্রোফোন!

সৌরভ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, প্রদ্য়োৎ সরকার ও ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা: পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে সঙ্গীতশিল্পী লগ্নজিতা চক্রবর্তীকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। এবার একইরকমের অভিযোগে সরব হলেন উত্তরপাড়ার আরেক সঙ্গীতশিল্পী। অভিযোগ, মাজদিয়ায় এক অনুষ্ঠানে তাঁকে গান গাইতে বাধা দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তাঁর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ! অভিযোগকারী সঙ্গীতশিল্পী, মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায় বলেন, 'আমার হাত থেকে মাইক্রোফোনটা কেড়ে, উনি বলেন, এই ধর্মের গান আমরা শুনব না।'

লগ্নজিতা চক্রবর্তীর পর, মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায়! আরও এক সঙ্গীতশিল্পীকে হেনস্থা...গান গাইতে বাধা....এমনকী মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ পর্যন্ত উঠল! এ-নিয়েই এবার সোশ্য়াল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা, সঙ্গীতশিল্পী মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায়। তাঁর দাবি, ২১ ডিসেম্বর, রবিবার, নদিয়ার মাজদিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন তিনি। অভিযোগ, সেখানেই আচমকা মঞ্চে উঠে তাঁর হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন এক ব্য়ক্তি। সেই সঙ্গে অভব্য় আচরণ করেন বলে অভিযোগ। 

অভিযোগকারী সঙ্গীতশিল্পী, মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায় বলেন, ' আমি 'তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো' মঞ্চে পরিবেশনা করেছিলাম। দর্শকেরাও ভীষণভাবে উপভোগ করেছেন গানটা। কিন্তু গান শেষ হওয়ার পরেই, এক ব্য়ক্তি উঠে আসেন স্টেজে। রীতিমতো আমার হাত থেকে মাইক্রোফোনটা কেড়ে, উনি বলেন, এই ধর্মের গান আমরা শুনব না। জাতপাতের গান আমরা শুনব না। আপনি অন্য় গান করুন। আমরা রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছিলাম। আমি এবং আমার মিউজিসিয়ান্সরা রীতিমতো বিস্মিত হয়ে পড়েছিলাম, এরকম ঘটনা, আমাদের সঙ্গে এই প্রথম জীবনে।' ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্য়ক্তিকে স্টেজ থেকে সরিয়ে দেন আয়োজকরা। এর আগে ফেসবুক লাইভে এসে মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায় জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনা সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতেন। কিন্তু কমিটি মেম্বারদের মধ্যে থেকে যিনি প্রধান, তিনি উঠে এসে বলেন যে, শিল্পী তার নিজের ইচ্ছে মতো গান গাইবেন। যাঁর গান ভাল লাগবে না তিনি বেরিয়ে যাবেন।'

নদিয়ার মাজদিয়ার ওই মেলা কমিটির সম্পাদক দেবাশিস বিশ্বাস বলছেন, 'আমাদের যিনি ওখানে উপস্থিত ছিলেন মাস্টারমশাই, সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চে উঠে, শিল্পীকে যথেষ্ট সাহায্য় করা এবং হঠাৎ একজন যিনি উঠেছিলেন, তাকে মেলার থেকে বের করে দেওয়া, মাইকে বলা হয়েছে, এই মেলাতে শিল্পী তার নিজের গান করবে। যদিও আমরা খুব আপসেট এই ব্য়াপারটা নিয়ে। এটা কাম্য় ছিল না। ঘটা উচিত হয়নি।'

গত শনিবারই, পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে, বেসরকারি স্কুলের অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন লগ্নজিতা চক্রবর্তী। লগ্নজিতা চক্রবর্তীকে হেনস্থার ঘটনায়, ধৃত মেহবুব মল্লিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, খুনের চেষ্টা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তবে, মাজদিয়ার ঘটনায়, অভিযুক্তর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানাননি সঙ্গীতশিল্পী মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায়। কিন্তু এই ঘটনায় বাংলাদেশের তুলনা টেনে রীতিমতো আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। 

অভিযোগকারী সঙ্গীতশিল্পী, মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায় বলছেন, 'আমাদের পাশের দেশে আমরা দেখলাম যেভাবে ছায়ানট গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। পাশের দেশে হচ্ছে। কে বলতে পারে, এই দেশে এইরকম ঘটনা ঘটতে থাকলে আগামীকালও এরকম ঘটতে পারে। আমাদের গান গাওয়াই বন্ধ হয়ে গেল। সেই আতঙ্কটা আছে।' মাজদিয়ার ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি নেতা প্রণয় রায় বলছেন, 'একটা সময় ছিল এই পশ্চিমবঙ্গ সঙ্গীত, শিল্পের পীঠস্থান ছিল। তৃণমূলের ১৫ বছরের জমানায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশে আজকে যে অবস্থা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেও সেই অবস্থা হচ্ছে। শিল্পীরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তারা কী গান করবে, সেক্য়ুলার গান করতে হবে। মা বলা যাবে না। দেবী দুর্গা বলা যাবে না। এই পরিস্থিতি নিয়ে গেছে মমতা ব্য়ানার্জির নেতৃত্বে সরকার!'

লগ্নজিতা চক্রবর্তীকে হেনস্থা আর শিল্পী মধুবন্তী মুখোপাধ্য়ায়কে 'গান গাইতে বাধা' দেওয়ার অভিযোগ নিয়েই এখন চর্চা সবমহলে।